বাংলাদেশে সর্ব দক্ষিণে উপকূলীয় জেলা বরগুনা । বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সবুজের সমারোহ, মৎস্য সম্পদে ভরপুর এ জেলা বিভিন্ন ভাবে সমৃদ্ব ।বাকলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যভূক্ত বরগুনা জেলা ১৪৮৭ খ্রি: পর্যন্ত স্বাধীন ছিল । রোকনউদ্দিন বারকাশাহের রাজত্ব কালে বরগুনা এলাকায় মুসলিম শাসন বিস্তৃত হয় । এ জেলা মোঘলদের অধিকারে আসে ১৬১১ খ্রি: । ১৭৫৭ খ্রি: পলাশীর যুদ্বের পর বরগুনা জেলা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পনীর শাসনাধীনে আসে ও ঢাকা জেলা অর্ন্তভূক্ত হয় ।১৭৯৭ সালে বাকের জেলা সৃষ্টি হলে বরগুনা বাকেরগঞ্জ জেলা আওতাভূক্ত হয় ।১৮৭১ খ্রি: পটুয়াখালী মহাকুমা সৃষ্ট হলে উহা পটুয়াখালী মহাকুমার আওতাভূক্ত ০১টি থানা মর্যাদা লাভ করে ।১৯৬৯ খ্রি:১লা জানুয়ারী বরগুনা মহাকুমা পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং ১৯৮৪ খ্রি: সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী বরগুনা জেলার সৃষ্টি হয় ।
জনগোষ্টী: বরগুনা জেলার অধিকাংশ জনগোষ্টী মুসলমান । তবে উল্লেখ যোগ্য অংশ মুসলমান ।বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং এম, বালিয়াতলী ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত বড়বালিয়াতলী ও বড়বাগী ইউনিয়নের অর্ন্তগত তালতলী গ্রামে রাখাইন সম্প্রদায় বসবাস করে । বেতাগী উপজেলার দেশান্তরকাঠী গ্রামে একটি খ্রিষ্টানপল্লী রয়েছে ।হিন্দু, মুসলমান,বৌদ্ব ও খ্রিষ্টান সকলে মিলে মিশে সুখে-শান্তিতে এ জেলায় বসবাস করছে ।এ জেলার প্রথম পুলিশ থানা ছিল আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে । উক্ত থানার আওতায় ১নং বদরখালী ইউনিয়নের অর্ন্তগত ফুলঝুড়ি ছিল একটি জলথনা ।১৯০৪ খ্রি: সালে ফুলছুড়ি থেকে জলথানাটি বরগুনায় স্থানান্তরিত হয় । ১৭৮৪ খ্রি: সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের উপকূলভাগে বার্মা থেকে বিতারিত রাখাইন সম্প্রাদায় আশ্রয় নিয়েছিল । বরগুনা বর্তমান এলাকা সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনের আওতাভূক্ত ছিল । বরগুনা নামে জনপদটি পোটকাখালীর কাছে ছিল । উত্তরবঙ্গ থেকে আগত বাওয়ালীরা সুন্দরবনের গাছ কেটে বরগুনা এলাকার পত্তন শুরু করে । এ এলাকায় অনেক জেলে বসবাস করত এবং নৌকা বানিয়ে জীবিকা করত ।
বরগুনা জেলার নামকরণ: বরগুনা নামটি মূলত: বাওয়ালীদের ব্যব্হৃত বড়গোনা শব্দ থেকে উৎপত্তি । অনেকের কাছে বারগুন নামক এক রাখাইন বাওয়ালীর নামানুসারে বরগুনা নামের উৎপত্তি বলে মনে করেন । তবে চন্দ্রদ্বীপের বানিজ্য কেন্দ্র ঝালকাঠীতে বরগুনা এলাকার বাওয়ালীরা/ব্যবসায়ীরা কাঠ নিয়ে জোযার ভাটার গোন হিসাব করে বড় বড় কাঠামী নৌকা নিয়ে এসে পৌছতো খাকদোন নদীতে। বিষখালী নদী ও খাকদোন নদীর সম্মিলন স্থানের কিছু ভিতরেখাকথোন নদীর তীরে নৌকা গুলি পরবর্তী গোনের জন্য অপেক্ষা করত । গোন মানে জোয়ার ভাটার অনুকূল প্রবাহ । এই বড় গোনের জন্য অপেক্ষাকৃত নৌকার জন্য কিছু কিছু ছোট ছোট দোকান গড়ে উঠেছিল । এ থেকে সৃষ্টি হয় একটি জনপথ । বাওয়ালীরা এ জনপথের নাম রাখেন বড়খোন । এই বড়খোন থেকেই পরবর্তীতে নামকরণ হয় বরগুনা । নোনা পানির এ বরগুনা উত্তরাঞ্চল থেকে বহু মানুষ আসত ব্যবসার কারনে । তখন গরু ও মহিষের প্রাচুযের কারনে দুধ,মিষ্টি প্রচুর উৎপাদিত হত । তখন এখানকার মানুষ ছিল খুবই অতিথিপরায়ন । আত্বীয়-অনাত্বীয় যে আসুক না কেন আত্বীয়তার কোন ক্রটি ছিল না ।কারো কাছ থেকে কোন আত্বীয় চলে গেলে
অপমান বোধ করত । আতিথীয়তা এ এলাকার বড় গুন ছিল বলে এ এলাকার নাম বরগুনা করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন । এ এলাকার নিকটবর্তী সুন্দরবন থাকায় এ এলাকায় পর্তুগীজ ও মগ জলদস্যুদের অভয়রন্য ছিল এবং তারা নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিল । বরগুনায় ডাকাতদের আশ্রয়স্থল ছিল । তারা নানা ধরনের গুনাহ করতো । এ সব ডাকাতদের গুনাহর কাজ বেশী হতো বলে বরগুনার নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন । তবে অধিকাংশের মতে বাওয়ালীদের বড় গোনা শব্দটি থেকে বরগুনার নামকরণ হয় ।
আয়তন: ১৮৩১ ব:কি: । সমগ্র বাংলাদেশের ১.২৭ ভাগ ।আয়তনের বিচারে উপকূলীয় ১৯টি জেলার মধ্যে ১১তম স্থান এবং ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৭তম স্থান ।
অবস্থান: বরিশাল বিভাগের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর পাশ সংলগ্ন । পূর্বে পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা উত্তরে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও পটুয়াখালী জেলা অংশ বিশেষ ।
যোগাযোগ: বরগুনা ভূ-খন্ডের চারপাশে অসংখ্য নদ-নদী রয়েছে । এর মধ্যে প্রধান নদী হচ্ছে পায়রা, বিষখালী,হরিনঘাটা ও বলেশ্বর । এ জেলার ১৬০ ব:কি: নদী রয়েছে ।যা জেলার আয়তনের প্রায় ২২ ভাগ ।এ জেলার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি চর ও দ্বীপ রয়েছে । এর সোনাকাটা চর,লালদিয়ার চর,ফাতরার চর, তেতুলবাড়ীয়ার চর, নলবুনিয়ার চর,কুমিরমারার চর আশার চর উল্লেখ্যযোগ্য ।
উপজেলার সংখ্যাঃ -৫টি । (১) বরগুনা সদর, (২) আমতলী, (৩) পাথরঘাটা, (৪) বেতাগী, (৫) বামনা।(তালতলী নামে আরও ১টি নতুন উপজেলা ঘোষনা হবার প্রক্রিযা চলছে)। ইউনিয়নের সংখ্যাঃ-৩৮টি। মেৌজার সংখ্যাঃ-৩১১টি। গ্রামের সংখ্যাঃ-৫৬৩টি।
(ক) বরগুনা সদর উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যাঃ-১০টি, (১) বরগুনা সদর, (২) গেৌরীচন্না, (৩) ফুলঝুড়ী, (৪) কেওড়াবুনিয়া, (৫) আয়লা পাতাকাটা, (৬) বুড়িরচর, (৭) ঢলুয়া, (৮) বরগুনা সদর, (৯) এম,বালিয়াতলী, (১০) নলেটানা ।
(খ) আমতলী উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যাঃ ১০টি, (১) গুলিশাখালী, (২) কুকুযা, (৩) আঠারগাছিয়া, (৪) হলদিয়া, (৫) চাওড়া, (৬) আমতলী সদর, (৭) আরপাঙ্গাশিয়া, (৮) পচাঁকোড়ালিয়া, (৯) কড়ইবাড়িয়া, (১০) বড়বগী ।
(গ) পাথরঘাটা উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যাঃ ০৭টি। (১) রায়হানপুর, (২) নাচনাপাড়া, (৩) কালমেঘা, (৪) কাকচিড়া, (৫) কাঁঠালতলী, (৬) পাথরঘাটা, (৭) চরদুয়ানী।
(ঘ) বেতাগী উপজেলার ইউনিয়নের সংখ্যা: ০৭টি ।(১) বিবিচিনি, (২) বেতাগী, (৩) হোসনাবাদ, (৪) মোকামিয়া, (৫) বুড়ামজুমদার, (৬) কাজিরাবাদ, (৭) সরিষামুড়ি।
( ঙ) বামনা উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যাঃ-০৪টি। (১) ডৌযাতলা, (২) বুকাবুনিয়া, (৩) বামনা, (৪) রামনা ।